অনলাইন ডেস্ক ॥ বরিশাল নগরীর আমবাগান এলাকার পোদ্দার রোডের জমিসহ বহুতল ভবন বিক্রি করে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ভাইয়ের রোষানলে পড়েছেন তার একমাত্র বোন। বিষয়টি নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র এবং পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা মিলছে না। উপরন্তু বোনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ভবনের মাসিক এক লাখ টাকা ভাড়া জোরপূর্বক হাতিয়ে নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ভাই। অভিযুক্ত তৌহিদ মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি ওই এলাকার সাবেক কাউন্সিলর ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মৃত মফিজুল ইসলাম ঝন্টুর ছেলে। আর অভিযোগকারী হচ্ছেন তৌহিদের একমাত্র বোন দিলরুবা ইসলাম রুবা। তার (রুবা) দাবি, তৌহিদ ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় ওই প্রভাব কাজে লাগাচ্ছে। রুবা জানান, তার বাবা মৃত্যুর আগে ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমিসহ আমবাগান এলাকার ২টি বহুতল ভবন তার নামে দিয়ে যান। এরপর তার ভাই তৌহিদ ওই জমি ও ভবন দখলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে তৌহিদ জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি এবং আমবাগানে থাকা ১টি বহুতল ভবন (ঝন্টু ম্যানশন-৩) লিখিয়ে নেন। দলিল মূলে ঝন্টু ম্যানশন-২ চারতলা ভবনটি ৭ শতাংশ জমিসহ আমার নামে থেকে যায়। ওই ভবনটি প্রাইভেট নার্সিংয়ে আবাসিক হিসেবে এক লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। অর্থসংকটের কারণে একপর্যায়ে ওই ভবনটি জমিসহ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন রুবা। এ জন্য প্রথমে তিনি তার ভাই তৌহিদের কাছ থেকে একাধিকবার প্রস্তাব রাখেন ভবনটি জমিসহ ক্রয়ের জন্য। কিন্তু তৌহিদ ওই ভবন কিনতে মোটেই আগ্রহী নন বলে সাফ জানিয়ে দেন। এর পরও যেকোনো কারণে তৌহিদকে উকিল নোটিশ করেন রুবা। যাতে করে একটি প্রমাণপত্র থাকে। সে অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম ঝন্টু ম্যানশন-২ ক্রয় করতে তৌহিদকে উকিল নোটিশ পাঠান। এরপর রুবা ঝন্টু ম্যানশন-২ বিক্রির জন্য ৫টি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। এর পরও তৌহিদ ওই ভবন ক্রয়ে কোনো রকম আগ্রহ দেখাননি। রুবা আরো জানান, গত বছর ২৮ অক্টোবর ঝন্টু ম্যানশন-২ ভবনটি ৭ শতাংশ জমিসহ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় ভবনটি ক্রয় করেন আইনজীবী আরিফ। ভবনটি বিক্রয়ের পর তৌহিদ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ওই ভবনের সামনে পাহারা বসায়। একই সঙ্গে ভবন ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে মাসিক ১ লাখ টাকা করে তুলে নিচ্ছেন তৌহিদ। কোনোভাবেই ভবনের দখল নিতে পারছেন না আইনজীবী আরিফ। এ কারণে ভবন মালিক রুবা এবং ক্রেতা আইনজীবী আরিফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে লিখিত আবেদন করলেও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। এদিকে ভবনের ভাড়াটিয়া রাজধানী নার্সিং হোস্টেলের সমন্বয়কারী মো. সোহেল বলেন, ভবন বিক্রির আগে তিনি রুবার কাছে ভাড়া পরিশোধ করতেন। গত অক্টোবর থেকে তৌহিদুল ইসলাম ভাড়া নিচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা বারের সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। তা ছাড়া তৌহিদের বোন রুবা এবং ভবন ক্রয়কারী আইনজীবী আরিফ আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এখানে তৌহিদ, তৌহিদের মা এবং রুবা একেকজন একেক রকম কথা বলছেন। বিষয়টি পারিবারিক রাজনৈতিক নয়। এ কারণে আমি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বোন জমি পাবে এ কথা সত্য। তবে তা বেশ কয়েকটি দাগে। ঝন্টু মেনশন আমার মায়ের নামে। তা বিক্রি করার কোনো বৈধ অধিকার আমার বোনের নেই। তাই আমি এই অবৈধ কাজে বাধা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আইনজীবী আরিফুর রহমান একজন ভূমিদস্যু। তার নেশা বিরোধীয় সম্পত্তি দখল করা। আমি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। আই এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। সূত্র: কালের কণ্ঠ।
Leave a Reply